বায়ান্ন দিঘী, কিংবা পাপাহার পুকুরের জলে আ ক ম যাকারিয়ার মুখ

এবং পুকুরটিও চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল, পুকুরের আনন্দ বেদনা

পাতা হয়ে ফুল হয়ে ফুটে ওঠে পৃথিবীতে, এই বিশ্বলোকে।

শাপলার ফুলে ফুলে পাতায় কখনো মিল থাকে, মিল কখনো থাকে না।

(বর্ষাকালে, বিনয় মজুমদার)

আজ তারা কই সব? ওখানে হিজল গাছ ছিল এক – পুকুরের জলে

বহুদিন মুখ দেখে গেছে তার; তারপর কি যে তার মনে হল কবে

কখন সে ঝরে গেল, কখন ফুরাল, আহা, – চলে গেল কবে যে নীরবে,

(আজ তারা কই সব, জীবনানন্দ দাশ)

পুরানো পুকুর বা দীঘি আমাদের এই অঞ্চলের ইতিহাস বা প্রত্নতত্ত্ব চর্চায় কোনো কালেও তেমন গুরুত্ব পেয়েছে বলে ঠাহর করি নাই। ঔপনিবেশিক ও পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী শর্তাধীনে প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস চর্চার যে গতিপ্রকৃতি তাতে বিশেষ কিছু ‘বস্তু বা নিদর্শন’ গবেষকদের অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ‘প্রত্নবস্তুতে’ রূপান্তরিত হয়েছে। যে-কোনো সুবৃহৎ কিংবা অলঙ্কৃত স্থাপত্য, ভাস্কর্য, মুদ্রা, শিলালিপি, তাম্রপট্ট, পোড়ামাটির চিত্রফলক আর নিদেনপক্ষে কয়েকটি বিশেষ ধরনের মৃৎপাত্র প্রত্নতত্ত্ববিদদের ইতিহাস বর্ণনা ও লিখনে কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে আছে। এখনো মূলধারার চর্চায় একই প্রবণতা। তার কারণ আছে বিভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রত্নতত্ত্ব চর্চার পরম্পরায় অতীত ‘গৌরব’ ও ‘স্বর্ণযুগের’ ধারণার উপস্থাপন ও পরিবেশনে উপযোগী হিসাবে প্রত্নতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন বাছাই করা হয় ও সুনির্দিষ্ট ভঙ্গিতে সেগুলোকে ব্যাখ্যা করা হয়। সমসাময়িক কালে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারকে ‘অতিরঞ্জিত করে রোমাঞ্চকর ও অনন্য’ হিসাবে প্রচার করার জন্যও এই সব নিদর্শন উপযোগী বেশি। পুকুর বা দীঘি তো সামান্য এবং তুচ্ছ নিদর্শন। ‘অসামান্যতা’ আর ’সামান্যতা’, ‘সাধারণ’ আর ‘অনন্যের’ সীমানা কী-ভাবে আমাদের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব চর্চায় তৈরি হল তা নিয়ে বড় পরিসরে আলোচনা করা যায়। আপাতত, ওই পথে আমি হাঁটব না। এই লেখার উদ্দেশ্য ভিন্ন।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে গত পনের বছরের কাজে আমাদের প্রথম ও প্রধান অবলম্বন যাকারিয়া স্যারের ‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইটি, যেটি সম্ভবত প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৪ সালে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে। প্রথম দিকের প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে আমরা সব ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক আলামতের/নিদর্শনের জমির উপরে (ও নিচে) উপস্থিতিকে ‘প্রত্নস্থান’ হিসাবে নথিভুক্ত করা শুরু করি। এদের মধ্যে পুরানো বিভিন্ন পুকুর বা দিঘীর ঘাটের নিদর্শনও ছিল। এই অঞ্চলের প্রত্নস্থান নিয়ে যাকারিয়া স্যারের বর্ণনায় সংলগ্ন বিভিন্ন পুকুর, দিঘী ও জলাশয়ের উল্লেখ আছে। ২০০৫ এর পরে নিবিড় ও সামগ্রিক জরিপের কাজ করতে গিয়ে পুকুর/দীঘিগুলোর মাহাত্ম টের পেলাম। বা বলা ভালো আ ক ম যাকারিয়া আমাদের পুকুর/দীঘির তাৎপর্য বোঝার দিকে নজর দিতে বাধ্য করলেন।

আদি মধ্যযুগে (খ্রি. ৬ষ্ট শতক – ১৩শ শতক) গৌড় ও বরেন্দ্র নামে পরিচিত এই অঞ্চলে অসংখ্য পুকুর বা দীঘি খোড়া হয়েছে। রাজা বা সামন্তগণ ধর্মীয় স্থাপনার মত এই পুকুর/দীঘি খোঁড়ায় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করতেন। জনসমষ্টির উদ্যোগও ছিল বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে দৈনন্দিন জীবনযাপন এবং সেচের কাজে জল ব্যবহারের জন্য পুকুর/দীঘি খনন করায়, সেগুলোর উঁচু পাড়ে ফলজ বৃক্ষ রোপনে। ধর্মীয় স্থাপনার সঙ্গে পুকুরের/জলাধারের অবস্থান শাস্ত্র অনুমোদিত। শত শত পুকুর/দীঘিকে একারণেই আমরা প্রথম অন্যান্য নিদর্শনের মতই গুরুত্ব দিতে শুরু করি। কাজ এগুনোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা লক্ষ করি, কেবল ওই সময়ের জল ব্যবস্থাপনার ধরন, বৈশিষ্ঠ্য ও ইতিহাস বোঝার জন্যই পুকুর/দীঘিগুলো গুরুত্বপূর্ণ  নয়। ওই সময়ের মানব বসতিগুলো জমির উপরে কী-ভাবে বিন্যস্ত ছিল, আর বসতিগুলোর আকার কেমন ছিল, প্রকার কেমন ছিল, এক বসতির সঙ্গে অন্য বসতির সম্পর্ক কেমন ছিল, বসতিগুলো কী-ভাবে পরিবর্তিত হলো, বা কেনই বা পরিবর্তিত অথবা পরিত্যক্ত হলো, তা বোঝার জন্য এখানকার নদী ও জমির ইতিহাসের পাশাপাশি পুকুর/দীঘির ইতিহাস বোঝাও সমান জরুরি। আমাদের এই উপলব্ধিতে পৌছালাম আ ক ম যাকারিয়ার সঙ্গে যাত্রা করে। পুকুর/দীঘির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা আর এখানে করব না।

আ ক ম যাকারিয়া স্যার ও তার বিভিন্ন অভিমুখের গবেষণাকর্ম নিয়ে লিখতে চেষ্টা করাটাই আমার জন্য একধরনের ধৃষ্ঠতা। তিনি বিভিন্ন ভাষা জানতেন। পুঁথি নিয়ে দারুণ কাজ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব চর্চায় তার অবদান নানান কারণেই অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অসামান্য মাঠকর্মভিত্তিক জরিপ ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করার পরেও তিনি প্রচারবিমুখ থেকেছেন। বিশেষকরে আত্মপ্রেম ও আত্মপ্রচারের কালে। কিন্তু আমার কাছে যাকারিয়া স্যারের কাজের তাৎপর্য অন্য আরো কিছু কারণে। মনোযোগের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ বইটি পড়লে, কিংবা তার অন্যান্য ইংরেজি ভাষায় লেখা প্রবন্ধ পড়লে সেটা স্পষ্ট হয়।

ফারসি ও আরবি জানার পাশাপাশি উনার সংস্কৃতেও ভালো দখল ছিল। উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত শিলালিপি ও তাম্রলিপির সঙ্গে মাঠকর্মের মাধ্যমে শনাক্তকৃত প্রত্নস্থানের তুলনামূলক আলোচনা করা, লিপির প্রাপ্তিস্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনকে সম্পর্কিত করে বিশ্লেষণ করা, নদী ও আদি নদী খাতের সঙ্গে লিপিতে প্রাপ্ত নদীসম্পর্কিত তথ্যকে সম্পর্কিত করার ক্ষেত্রে, আমার মতে, তিনি অনন্য। সাম্প্রতিক কিছু ব্যতিক্রমি গবেষণা ছাড়া, উনার এই পদ্ধতি উনার সমসাময়িক অনেক বিখ্যাত প-িতও রপ্ত করতে পারেন নাই।

যাকারিয়া স্যারের কাজের আরেকটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপের নিবিড় ও বিশদ বর্ণনা। আমরা পরিপ্রেক্ষিত/কনটেক্সট ধারণাটি বিদ্যায়তনের পরিসরে রপ্ত করেছি অনেক পরে। একটি প্রত্নস্থান ও প্রত্নবস্তুর যেখানে পাওয়া যাচ্ছে তার আশেপাশের ভূমিরূপ, নদী, পুরানো নদীখাত, বিল, পুকুর ইত্যাদি সহ সকল কিছুর বর্ণনা তিনি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রত্নস্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সঙ্গে সেই পরিপ্রেক্ষিতের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। তার বিরল পর্যবেক্ষণ সামর্থ্যরে আর সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর গবেষণা পদ্ধতির প্রমাণ তার বই ও লেখায় অজস্র রয়েছে।

ইখতিয়ার উদ্দীন বখতিয়ার খলজির তথাকথিত তিব্বত আক্রমনের পথ সম্পর্কে তিনি নলিনীকান্ত ভট্টশালী ও মেজর রেভার্টিও মতে সঙ্গে দ্বিমত পোষন করেছেন। তার মত আমার কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে সবচাইতে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত মতামত পর্যালোচনা করার ভঙ্গি। তিনি ওই মতামত প্রদান করার ক্ষেত্রে তৎকালীর নদীব্যবস্থার যে পর্যালোচনা করেছেন, জেমস রেনেল  ও ফ্রান্সিস বুকানন সহ ঔপনিবেশিক শাসনামলেল বিভিন্ন জরিপের উপাত্ত ও মানচিত্রের পর্যালোচনা যেভাবে ব্যবহার করেছেন, টেক্সচুয়ার উৎসের সঙ্গে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাত্তের যেভাবে তুলনা করেছেন সেটা কেবল অনুকরণীয়ই নয়; বরং এখনো পর্যন্ত প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় তার পর্যালোচনার পদ্ধতি বিরল। বখতিয়ার খলজি নদীয়া আক্রমন করেছিলেন বলে সর্বজনগ্রাহ্য যে মত সেই মতামতকেও তিনি প্রশ্ন করেছেন অসাধারণ নৈপুন্যের সঙ্গে। মিনহাজের বিবরণীর অনুপঙ্খ পাঠ ও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাত্তের আলোচনার মাধ্যমে তিনি প্রস্তাব করেছেন যে, নদীয়ার বদলে নওডীহ অধিক গ্রহণযোগ্য আর এই নওডিহ বর্তমান চাপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত।  আমাদের দুর্ভাগ্য যে, যাকারিয়া স্যারের পর্যবেক্ষণ ও বর্ণনার ভঙ্গি আমরা অনুসরণ করার চেষ্টা করি নাই। এর প্রধান কারণ উনাকে অনুসরণ করার জন্য যে নিষ্ঠা, ধৈর্য্য ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রয়োজন হয় তা কেউ রপ্ত করতে চায় না।

দক্ষিণ এশিয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিব গবেষণার আরেক প্রতিবদ্ধকতা হলো যুগবিভাজন নির্ভরতা। গবেষকগণ এলাকা ও নির্দিষ্ট কালপর্ব/যুগ নিয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করেন ও পরিচিতি লাভ করেন। কেউ ‘প্রাচীন’ যুগের বিশেষজ্ঞ, কেউ ‘মধ্যযুগের’ বিশেষজ্ঞ, কেউ ঔপনিবেশিক যুগের বিশেষজ্ঞ। কেউ প্রতীমালক্ষনবিদ্যায় বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করেন, কেই প্রত্নলিপিবিদ্যায়, কেউ মাঠকর্মে, কেউ স্থাপত্যবিদ্যায়। এধরনের প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে বিভাজিত জ্ঞানের সমস্যা দৃষ্টিগোচর হয় যখন এক প্রকোষ্ঠের জ্ঞানকে আরেক প্রকোষ্ঠের মাপে মানিয়ে নিতে হয়। তাতে করে কোনো সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয় না। অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও ধরন, নদীব্যবস্থা, ভূমিরূপসহ সামাজিক, পরিবেশিক ও অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াসমূহ ‘প্রাচীন’ ও ‘মধ্যযুগের’ মধ্যের কৃত্রিম ও স্থানিকভাবে সুনির্দিষ্ট (যদিও বিশ্বজনীন হিসাবে দাবি করা হয়) সীমারেখা মেনে চলে নাই। যাকরিয়া স্যার যুগবিভাজনকেন্ত্রীক জ্ঞানকে সরাসরি প্রশ্ন না করলেও, প্রাচীন ও মধ্যযুগের সীমারেখাকে অতিক্্রম করতে সক্ষম হয়েছিলেন মাঠ সম্পর্কে তার প্রত্যক্ষ ধারণা থাকার কারণে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে শাসক ও শাসিতের ধর্ম পরিবর্তনের সাথে সাথে, শাসকের বদলের সঙ্গে জনমানুষের নৈমিত্তিক জীবনযাপন বদলে যাওয়া সমস্থানিক না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল, যাকারিয়া স্যারের বিপুল প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস বিষয়ক কর্মকা-ের ধারণাগত ও পদ্ধতিগত মূল্যায়ন করতে আমরা এখনো সক্ষম হই নাই। তাঁকে অনুসরণ করার বাসনা আমাদের জাগ্রত হয় নাই। কারণ এই অনুসরণে বৈষয়িক প্রাপ্তিযোগ সামান্য, চটজলদি খ্যাতি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।      

এই আলোচনা ছিল প্রসঙ্গে আসার উছিলা। আসল গল্পে ফিরে আসি এবারে।আমরা এখন কাহারোলের মাধাবগাঁওয়ে খনন করছি। গতকাল (২৮ জুলাই, ২০১৬) আমরা (আমি, শুভ, দিদার, মাসুম, নাসিম ও শহীদুল ভাই) কাহারোল উপজেলার ভেলওয়া গ্রামে যাই। আমি ও শুভ বাদে কেউই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রত্নতত্ত্ব  শেখেনি। দিদারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় ২০০১ সালে বিরামপুরের চ-ীপুরে জরিপ করার সময়। তখন ও ক্লাশ সিক্সে পড়ে। তারপরে পড়াশুনা বেশি না আগালেও, আমাদের জরিপ ও খনন কাজে অংশনেয়ার মধ্য দিয়ে ও মাঠ প্রত্নতত্ত্বের কাজ অনেকটাই শিখে গেছে। মাসুমও তেমনই ভাবে গত তিন বছরে অনেক কাজ জেনে গেছে। শহীদুল ভাইয়ের ইজি বাইক হলো গত বছর থেকেই আমাদের বাহন। উনি সারাদিনই আমাদের সঙ্গে থাকেন আর নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন কাজ করেন। নাসিম কাহারোলের ছেলে। সাইকেলে করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘোরা ওর স্বপ্ন। আমরা সবাই যাকারিয়া স্যারকে গুরু জ্ঞান করি।

২০১৪ সালের জরিপে এখানকার প্রত্নস্থানগুলো আমরা নথিভুক্ত করেছিলাম। যাকারিয়া স্যার তার বইয়ে এই গ্রাম থেকে একই সঙ্গে একটি জৈন প্রতীমা, একটি বৌদ্ধ প্রতীমা, একটি ব্রহ্মা প্রতীমা পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। প্রতীমাগুলোর প্রাপ্তিস্থান বর্ণনা করেছেন তিনি ওইখানকার পুকুর ও দীঘির অবস্থানের সাপেক্ষে। তাঁর বর্ণিত প্রত্নঢিবিগুলো অনেক আগেই স্থানীয় মানুষজনের হাতে ধ্বংস হয়ে যায়। একই স্থানে তিনটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবতার উপস্থিতি হওয়ায় ঘটনাকে যাকারিয়া স্যার কৌতুহলউদ্দীপক হিসাবে উল্লেখ করেছেন। আমাদের ভেলওয়া সম্পর্কে আগ্রহেরও প্রধান কারণ এটি।

১৯৬৯ সালে তিনি এই গ্রামে এসেছিলেন। তখন তিনি ছিলেন দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক। কাহারোলের একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শ্রী গোপেশ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো দেরি করে ফেলেছেন। স্থানীয় যে মানুষটি তখন তার সঙ্গে ছিলেন তিনি তো মারা গেছেন দুই বছর আগেই। তিনি বেঁচে থাকতে যদি আসতেন তাহলে জানতে পারতেন কোন স্থান থেকে কোন প্রতীমা পাওয়া গেছিল।’ আমরা ওই গ্রামে পুনরায় জরিপে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানালে গোপেশ স্যার আমাদের সঙ্গ দিতে রাজি হন আগ্রহের সঙ্গে।

আমরা যাই ভেলওয়া গ্রামে। গিয়ে দেখি গোপেশ স্যার ওই গ্রামের বয়স্ক মুরুব্বিদের মধ্যে একজন – শ্রী পশুপতি রায়কে আগেই বলে রেখেছেন। পশুপতি রায়ের বয়স এখন আশি। তার উঠোনোই আমরা বসলাম। অশতিপর এই ভদ্রলোক ১৯৬৯ সালের এই গ্রামে প্রতীমা নিতে আসা এক ডিসি সাহেবের গল্প বললেন। তিনি জানালেন, ডিসি সাহেব খুবই ভদ্রলোক ও বিনয়ী ছিলেন। জোর করে বা প্রশাসনিক ক্ষমতা দেখিয়ে তিান ওই প্রতীমাগুলো নিয়ে যাননি। ‘ডিসি সাহেব সবাইকে ডেকে বললেন আপনারা যদি এই প্রতীমাগুলোর পূজা করেন তাহলে আমি এগুলো নেব না। তবে সব প্রতীমা তো আমরা চিনি না, বা পূজাও করি না। আমাদের পূজার জন্য তিনি একটি নারায়ন প্রতীমা (সম্ভবত বিষ্ণু প্রতীমা) রেখে গেলেন। তখন তার সঙ্গে ছিলে প্রফেসর কোবাত সাহেব। ওই নারায়ণ প্রতীমা পরে চুরি হয়ে যায়।’ – বলতে থাকেন পশুপতি রায়। তার বাড়ীটির সামনেই একটি ঢিবির অবশিষ্টাংশে প্রতিষ্ঠিত ‘ঠাকুরের থান’। উপরে একটা বটগাছ। মাটি দিয়ে উঁচু করে থান বানানো। পাশেই পড়ে আছে একটি পাথরের টুকরা যেটি কোনো স্থাপনার অংশ ছিল। প্রতিমাসে এখানে এখনো হরিবাসর আর নাম-সংকীর্তন হয়। কিছু দুরের বাঁশঝাড় খুড়তে গিয়ে ওই জৈন তীর্থঙ্করের প্রতীমাটি পাওয়া যায় আরো ছোট ছোট অন্য প্রতীমার সঙ্গে। পরে সেটা নিয়ে এসে বর্তমান থানের উপরে বটগাছের কাছে রাখা হয় বলে তিনি জানান। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবয়সী কয়েকজন বলেন, জৈন প্রতীমাটি শুরু থেকেই বটগাছের কাছে ছিল। এ-মতভিন্নতা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কারণ বাঁশঝাড় আর বর্তমানে থানের মধ্যে দুরত্ব ৮-১০ ফুট। সম্ভবত, একই ঢিবির অংশ ছিল। আবার, একই দেবালয়ে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতীমা উপাসনা হওয়াও ইতিহাসে নজিরবিহীন নয়।

যাকারিয়া স্যারের বই পড়ে শোনাচ্ছি শ্রী পশুপতি রায় (ডান থেকে প্রথম জন) ও শ্রী গোপেশ চন্দ্র রায়কে (ডান থেকে দ্বিতীয় জন)

মাঠে কাজ করার সময় আমরা যা করি তা যে সামগ্রিক ভাবে নৈর্ব্যাক্তিক, বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হয়ে উঠছে পারে না সে বিষয়ে এন্তার আলাপ-বাহাস রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস, নৃবিজ্ঞানসহ সমাজ বিজ্ঞানের শাস্ত্রগুলোতে। কর্তাসত্তাশ্রয়ীতা/সাবজেকটিভিটি কিংবা আন্তঃকর্তাসত্তাশ্রয়ীতা/ইন্টারসাবজেকটিভিটি আমাদের দেখার, বোঝার ও ব্যাখ্যা করার ধরন-ভঙ্গি-পদ্ধতিকে গঠন করে, আকার দেয় ও বদলে দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক হিসাবে বস্তুনিষ্ঠ ও নৈর্ব্যক্তিক হয়ে ওঠার অসম্ভব চেষ্ঠা করার চাইতে অনেক জরুরি হয়ে দাঁড়ায় কাজে-বিবরণীতে-লিখনীতে নিজ সত্তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে থাকা। পারিভাষিকভাবে একই বলে আত্ম-প্রতিবর্তীকরণ/সেল্ফ-রিফ্লেক্সিভিটি। মাঠে কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্মৃতি-অনুভূতি-অনুশীলন প্রবলভাবেই উপস্থিত থাকে। শ্রী পশুপতি রায়ের বাচনভঙ্গী ও দেহভঙ্গী ছিল আমার কাছে স্মৃতিউদ্রেককারী। তাকে দেখে মনে পড়ল। শৈশবে দেখা বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক জয়ন্ত স্যারের কথা। খাটো করে ধুতি পড়া জয়ন্ত কুমার দাশগুপ্তকে দেখতাম। বিনম্র ভঙ্গিতে হেঁটে যেতে। তখন তো আর জানি না যে, ‘মনসা মঙ্গল’ নিয়ে অসাধারণ গবেষণা করেও তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি পান নাই, যদিও তাঁর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন আরেক দিকপাল শশীভূষণ দাশগুপ্ত। পরে, ওই গবেষণাই গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। পশুপতি রায় জয়ন্ত স্যারের মতন শিক্ষক ছিলেন না। কোবাদ আলী স্যারের অনুজ মোজাম্মেল হোসেন সাহেবও শিক্ষক ছিলেন না তাঁর বড় ভাইয়ের মত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পরে চাকুরী করে এখন অবসর নিয়েছেন। ভেলওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলার পরে ফোনেও বেশ কয়েকবার উনার সঙ্গে আলাপ করেছি। এই দুটি মানুষের দেহভঙ্গী ও বাচনভঙ্গীর কোমল নম্রতা ও দৃঢ়তা, বড় হয়ে ওঠার পথে সাক্ষাৎ হওয়া অনেক মানুষের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। মনে করিয়ে দিচ্ছিল যাকারিয়া স্যারের বিনয়ের কথাও। আমরা প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মাননা দেব, এই কথা যখন যাকারিয়া স্যারকে জানাই তখন তিনি আমাকে বলেন, ‘আমি এই সম্মাননার যোগ্য নই’। সম্মাননা প্রদানের দিন ভাষণেও তিনি একই কথা বলেছিলেন। এই বিনয়, নিরহঙ্কার ও নম্রতা  বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এখন আর দেখি না। আমার পিএইডি থিসিসটি যাকারিয়া স্যার ও রাজগুরু স্যারকে উৎসর্গ করেছি। যাকারিয়া স্যারকে থিসিস দেখাতে নিয়ে গেলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই থিসিস উৎসর্গ হওয়ার যোগ্য নই’। প্রত্যুত্তরে আমি বলেছিলাম, আপনি তো যোগ্য বটেই। আমি আপনাকে যে থিসিস উৎসর্গ করতে পেরেছি সেটা আমার পরম সৌভাগ্য ও গর্বের বিষয়। জানিনা উনি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন কী না। 

অধ্যাপক কোবাদ আলী ছিলেন বীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের বাংলার শিক্ষক। তিনি ঘুরে বেরাতেন ঐতিহাসিক নিদর্শনের খোঁজে। জানালেন তাঁর বন্ধু গোপেশ স্যার ও তাঁর অনুজ মোজাম্মেল হোসেন সাহেব। কোবাত আলী স্যার গত হন ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। সঙ্গে করে নিয়ে যান এই এলাকার ইতিহাসের আর যাকারিয়া স্যারের সঙ্গে মাঠে জরিপকালে সঙ্গ দেয়ার স্মৃতি। যাকারিয়া স্যার বা কোবাত আলী স্যারদের ছায়াসঙ্গী করেই আমরা দেখছিলাম পুকুর, দীঘি, থান, কেটে ফেলা ঢিবি, প্রতীমা খুঁজে পাওয়ার সেই বাঁশঝাড় আর মানুষ। 

বায়ান্ন দীঘির পাড় কেটে তৈরি হওয়া বসতি ও কাঁঠাল বাগান

‘বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইটি পড়ে পড়ে যাকারিয়া স্যারে বর্ণনা অনুসরণ করে হারিয়ে যাওয়া প্রতীমা, মানুষ আর প্রত্নঢিবির অবস্থান বোঝার চেষ্টা করলাম। দুটি পুকুর। স্থানীয় লোকজন বলেন ‘ছোট সুসকাই’ আর ‘বড় সুসকাই’। গোপেশ স্যার জানালেন, এই পুকুর দুটির আসল নাম ‘শৌচকায়’, যা সূচি হওয়া বা পবিত্র হওয়া থেকে এসেছে। পুরানো দলিল ঘেটে এই নাম জানা গেছে। উত্তরে আরেকটি পুকুরের নাম ‘পাপাহার’ (পাপকে আহার করে যে পুকুেরর জল)। একটি পুকুরের মধ্যে জঙ্গল হয়ে গিয়েছিল বলে তার নাম ‘দলপুকুর’। কাছেই সবচাইতে বড় পুকুরটির নাম ‘বায়ান্ন দীঘি’। বায়ান্ন বিঘা জমির কেটে খোঁড়া বলে।

সাঁওতাল গ্রামের মুরুব্বী নাতার মুরমুর সঙ্গে

মোজাম্মেল হোসেন সাহেবের (ডান থেকে দ্বিতীয় জন) সঙ্গে।

ভেলওয়া থেকে যাকারিয়া স্যার সংগৃহিত জৈন তীর্থঙ্কর

ঋষভনাথের প্রতীমা (বর্তমানে দিনাজপুর জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে)।

ভেলওয়া গ্রামে একটি ঢিবির অবশিষ্টাংশে গড়ে ওঠা থান। সামনে উন্মোচিত ইটের কাঠামো। এখান থেকেই জৈন প্রতীমাটি পাওয়া গেছে বলে জানান অনেকে।

ভেলওয়া গ্রামে ঢিবি কেটে উপরে তৈরি করা একটি ঘর। সামনে ইটের টুকরো।

স্থানীয় অধিবাসীরা ঢিবিগুলো কেটে সমান করে ফেলেছে বহু আগে। পুকুরগুলোর উঁচু পাড়ও কেটে সমান করে ফেলা। এই এলাকার মালিকানা দেশভাগ পূর্বকালে ছিল শরৎ চৌধুরীদের। দেশভাগের পরে ভূসম্পত্তি বিনিময় করে ভারত থেকে এখানে আসেন একদল মানুষ। নতুন বসতি তৈরি করেন। তারা ও থেকে যাওয়া স্থানীয় অন্য অধিবাসীরা ঢিবিগুলো কেটে সমান করে ফেলেন। নতুন বসত গড়েন। বায়ান্ন দীঘির পাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। ভেলওয়া গ্রামের বর্তমানে বসবাস করা অনেক পরিবারই ১৯৪৭ সালের পরে সম্পত্তি বিনিময় করে এখানে এসেছেন। আশ্চর্য! সেই আদি মধ্যযুগের মত পুকুরগুলো এখনো বসত গড়ে তোলার কেন্দ্র হিসাবে কাজ করছে। সেই গ্রাম, গ্রামের উপাসনালয় লুপ্ত হয়ে গেছে। পুকুরগুলো থেকে গেছে দেশভাগের পরে আপন বসত ছেড়ে আসা উদ্বাস্তু মানুষের নতুন বসতি, নতুন জীবনের, নতুন স্বপ্নের  সাক্ষী হয়ে।

কোবাদ আলী স্যারও দেশভাগের পরে এখানে চলে আসা পরিবারের একজন। তিনি এখানকার প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস বোঝায় সঙ্গ দিয়েছিলেন যাকারিয়া স্যারকে। বায়ান্ন দীঘির পাড়ে সাঁওতাল পাড়ায় বসে কথা বলার জন্য সবচেয়ে মুরুব্বি – নাতার মুর্মুকে খুঁজে বের করলেন গোপেশ স্যার। তিনি তার নিজের বয়স কত জানেন না। তিনি জানালেন, এই বায়ান্ন দিঘী একসময় জলজ জঙ্গলে (স্থানীয় ভাষায়, দল) ভরে গিয়েছিল। আরো শুনলাম, দীঘির মালিকানা নিয়ে মোকদ্দমা চলছে এখন। তা চলুক। কিন্তু যাকারিয়া স্যার, কোবাদ আলী স্যাররা কোথায় গেলেন? ১৯৬৯ সালের ভেলওয়া, প্রতীমা সংগ্রহ, প্রত্নঢিবি, বায়ান্ন দিঘী, শৌচকায় ও পাপাহার পুকুরের গল্প তো তাদের কাছ থেকে শোনা হল না।

যাকারিয়া স্যার ও আমরা কয়েকজন।

এই অঞ্চলে শত সহস্র পুকুর ও দীঘির নাম আমাদের আজও জানা হয় নাই। আধুনিক পানি ব্যবস্থাপনার রাজনীতিতে পুকুর ও দীঘি নির্ভর এই অঞ্চলের পরম্পরাগত পানি ব্যবস্থাপনা বহু আগেই পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে। এই জলাশয়গুলোর কত বিচিত্র নাম। সেসব নামের কত ব্যঞ্জনা। তাদের নিয়ে কত জাদুর গল্প এখনো লোকের মুখে মুখে ফেরে। পুকুরগুলো তো বেশিরভাগই এখন খটখটে শুকনো। উঁচু পাড় কেটে সমান করে চাষের জমি বানানো হয়েছে অনেক পুকুর আর দীঘি। যে মানুষগুলো এসব পুকুর খুঁড়েছিলেন বা পুকুরের জল ব্যবহার করতেন তারা তো আমাদের শ্রুতি ও স্মৃতি থেকে বিলীন হয়ে গেছেন সেই কবেই। একসময় যে মানুষগুলো ঘুরে ঘুরে পুরানো জিনিস, নিদর্শন, পুঁথি, গল্প, রূপকথা, পুকুর/দীঘি ও তাদের নাম খুঁজে বেড়াতেন, তারাও সবাই হারিয়ে গেছেন। অনেক পুকুর টিকে আছে আজও। কেউ কি ভবিষ্যতে কোনোদিন এই পুকুর, দীঘি, জলাশয়গুলোর নাম জানার চেষ্টা করবে? লিখে রাখবে তাদের কথা ও অলৌকিক কাহিনী? তাদের সঙ্গে লিপ্ত লৌলিক মানুষগুলো এখন অলৌকিক।  পুকুর ও দীঘি আর তাদের নিয়ে নানান অলৌকিক গল্পগুলো কি হারিয়ে যাবে কোনো এক দিন আমাদের সামষ্টিক বিস্মরণের তোড়ে? হেরিটেজ সংরক্ষণের জন্য এখন কত টাকা, কত সেমিনার, কত কথা। আমাদের এই নাগরিক হেরিটেজ-প্রেমে পুকুর ও দীঘির মত প্রত্নস্থান ব্রাত্য। গুরুত্বহীন। অলাভজনক। কেননা সর্বজনের জীবনযাপনের সঙ্গে জমির, নদীর, পুকুরের সম্পর্কের ইতিহাস দিয়ে আমাদের জাতীয়তাবাদী দম্ভ ও বাসনা প্রকাশ করা যায় না। এই বিষয় নিয়ে গবেষণায় টাকাও দেবে না হয়ত কেউ।

পাড়ে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের কাদা থেকে মাছ ধরার কসরৎ দেখতে দেখতে বায়ান্ন দিঘীর জলের দিকে তাকালাম। কাঁঠাল গাছের ছায়ায়, সন্ধ্যার আবছা আলোয় সিগারেটের ধোঁয়ার আড়ালে মনে হল দীঘির জলের মধ্য দিয়ে যাকারিয়া স্যার দেখছেন। জলের দর্পনে আ ক ম যাকারিয়ার এই অলৌকিক মুখদর্শন কি আমার বিভ্রম?

—–

কলেজ রোড, সেতাবগঞ্জ। ৩০ জুন ও ১ জুলাই, ২০১৬।

পরিমার্জন: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার জন্মশতবর্ষ স্মারকগ্রন্থে প্রকাশিত।         

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

Blog at WordPress.com.

Up ↑

%d bloggers like this: